পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু আল্লাহ
তায়ালার তারীফ ও প্রশংসা এবং নবীয়ে করীম (ছঃ)-এর উপর দরুদ শরীফ পড়ার পর,
ওলামায়ে কেরাম ও ছুফীকুল শিরোমণি, মোজাদ্দেদে দ্বীন, হজরত মাওলানা ইলিয়াছ
(রহঃ) আমাকে আদেশ করেন যে, তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজন অনুসারে কোরআন ও হাদীছ
অবলম্বনে যেন একটা সংক্ষিপ্ত বই লিখি। এতবড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার
পরকালে নাজাতের উছিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই। অতঃপর
প্রত্যেক ইসলামী মাদ্রাসা, ইছলামী সংঘ, স্কুল ও প্রতিটি ইছলামী শক্তি এমন
কি প্রত্যেক মুছলমানের খেদমতে আরজ এই যে, বর্তমান জামানায় দ্বীনের যে
দূরাবস্থা এবং দ্বীনের উপর কাফেরদের ন্যায় মুছলমানের তরফ হইতে এমনভাবে
আক্রমণ চলিতেছে যে, সাধারণ মুছলমান তো দূরের কথা খাছ লোকেরা পর্যন্ত ফরজ,
ওয়াজিব তরক করিতেছে। বরং লক্ষ লক্ষ লোক প্রকাশ্যভাবে কুফুরী ও শেরেকে লিপ্ত
রহিয়াছে, আরও আশ্চর্যের বিষয় যে, তাহারা উহাকে শেরেক ও কুফুরী বলিয়া
ধারণাই করে না। উপরন্তু ধর্মহীনতা যে ভাবে প্রসারতা লাভ করিতেছে এবং যাবতীয়
অন্যায় অত্যাচার যে ভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছে, সে সব আজ কাহারও
অজানা নাই। এইসব কারণেই সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম জনসমাজ হইতে দূরে সরিয়া
পড়িয়াছে। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি এই দাঁড়াইয়াছে যে, সাধারণ মানুষ ধর্মীয়
শিক্ষা দীক্ষা হইতে ক্রমাগত বঞ্চিত হইয়া যাইতেছে। সাধারণ লোক নিরুপায় হইয়া
বলে, আমাদিগকে বলিবার মত কেহ নাই। আর ওলামারা বলেন যে, আমাদের কথা শুনিবার
মত কেহ নাই। কিন্তু আল্লাহর দরবারে সাধারণ লোকের এই সব ওজর আপত্তির কোনই
মূল্য নাই। কিন্তু আল্লাহর দরবারে সাধারণ লোকের এই সব ওজর আপত্তির কোনই
মূল্য নাই। কারণ ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা সকলরেই নিজস্ব কর্তব্য। অপরাধী আইন
না জানার আপত্তি দর্শাইলে দুনিয়ার কোন সরকারই তা গ্রাহ্য করে না, কাজেই
আল্লাহর দরবারে তা কেমন করিয়া গ্রাহ্য হইবে? এই ভাবে ওলামাদের আপত্তি ও
নিরর্থক। কারণ তাহারা যেসব মহাপুরুষদের নায়েব হইবার দাবী করেন, তাঁহারা
দ্বীনের তাবলীগের নিমিত্ত কতই না ক্লেশ যাতনা ভোগ করিয়াছেন। তাঁহারা কি
পাথরের আঘাত সহ্য করেন নাই? শত গালি ও কটুবাক্য শুনেন নাই? বিভিন্ন মছিবত
বরদাশত করেন নাই? শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করিয়াও তাঁহারা উদারচিত্তে
ইছলামের আহকাম মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছায়া দিয়াছেন। সাধারণভাবে
মুছলমানগণ তাবলীগ করাকে একমাত্র ওলামাদেরই দায়িত্ব বলিয়া মনে করে। অথচ ইহা
ঠিক নহে। কারণ অন্যায় কাজ যাহার সম্মুখে সংঘটিত হয়, শক্তি থাকিলে উহাতে
বাধা প্রদান করা তাহার উপর ওয়াজিব। আর যদি মানিয়া লওয়া হয় যে, উহা ওলামাদের
দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্বে যদি তাহারা ত্রুটি বা অবহেলা করেন তবে স্বভাবতই
উহা প্রত্যেক ব্যক্তির জিম্মায় বর্তাইয়া যায়। কোরআন ও হাদীছে যে গুরুত্বের
সহিত তাবলীগ সম্পর্কে বর্ণনা করা হইয়াছে উহা দেখিয়া প্রতিয়মান হয় যে, এই
বিরাট দায়িত্ব শুধু আলেমদের ঘাড়ে চাপিয়া কেহ নিশ্চুপ বসিয়া থাকিতে পরে না। অতএব আমার আবেদন, প্রত্যেক মুছলমান যেন বর্তমান জামানায় তাবলীগের কাজে কিছু অংশ গ্রহণ করে। এখানে
আর একটি কথা জানিয়া রাখা দরকার যে তাবলীগের জন্য বহুত বড় আলেম হওয়ার কোন
প্রয়োজন নাই। কাহারও যদি দ্বীনের একটি মাত্র কথা জানা থাকে উহা অন্যের নিকট
পৌঁছাইতে হইবে। আর তার সামনে কোন নাজায়েজ কাজ হইতে দেখিলে সামর্থ্য থাকিলে
উহা বন্ধ করা তার উপর ওয়াজিব। এই কিতাবে সংক্ষিপ্তভাবে মাত্র সাতটি
পরিচ্ছেদ বর্ণনা করা হইয়াছে। Chief Writer: Shaikhul Hadith Hazrat Moulana Hafez Mohammad Zakariya Saharan Puri (R:)
Translator: Moulana Mohammad Sakhawat Ullah Momtazul Mohadhesin, Research Scholar.